মেসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত

নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক

আগস্ট ১৯ ২০২৫, ০৭:৩০

দাঁত পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত গাছের কাঁচা অথবা শুকনো ঢাল কিংবা শেকড়কে মেসওয়াক বলে। এটি সর্বনিম্ন এক বিঘত লম্বা এবং কনিষ্ঠা আঙুল পরিমাণ মোটা হতে হয়। মেসওয়াক রাসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রিয়তম সুন্নাহ। ইন্তেকালের পূর্বে তাঁর সর্বশেষ আমলও ছিল মেসওয়াক। হাদিস শরিফে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে হয়েছে, তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘আমার উপর আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নেয়ামত এটা যে, আমার ঘরে, আমার পালার দিনে, আমার কণ্ঠ ও সিনার মাঝখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ইন্তেকাল হয় এবং আল্লাহ তায়ালা সেসময় আমার থুথু তাঁর থুথুর সঙ্গে মিশ্রিত করে দেন। তখন আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর আমার ঘরে প্রবেশ করে এমতাবস্থায় যে, তার হাতে মেসওয়াক ছিল। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে আমার বুকের সঙ্গে হেলান দিয়ে রেখেছিলাম।

আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি আব্দুর রহমানের দিকে তাকাচ্ছেন। এতে বুঝলাম তিনি মেসওয়াক চাচ্ছেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি আপনার জন্য মেসওয়াক নেবো? তিনি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন। আমি মেসওয়াক নিলাম। তবে মেসওয়াকটি ছিল তার জন্য শক্ত। বললাম, এটি কি আমি আপনার জন্য নরম করে দেবো? তিনি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন। আমি তা চিবিয়ে নরম করে দিলাম। এরপর তিনি ভালোভাবে মেসওয়াক করলেন। তার সামনে পাত্র অথবা পেয়ালায় পানি রাখা ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের হাত দুটো পেয়ালায় প্রবেশ করিয়ে স্বীয় চেহারা মুছতে লাগলেন। তিনি বলছিলেন, আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, মৃত্যু যন্ত্রণা সত্যিই কঠিন। অতঃপর দুই হাত উপরের দিকে তুলে বলেন, আমি উর্ধ্বলোকের মহান বন্ধুর সঙ্গে মিলিত হতে চাই। এ অবস্থায় তাঁর ইন্তেকাল হলো এবং হাত শিথিল হয়ে গেল। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৪৪৯)।

মেসওয়াকের গুরুত্ব: হজরত জায়েদ ইবনে খালেদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের জন্য কষ্টের আশঙ্কা না থাকলে আমি প্রত্যেক নামাজের সময় মেসওয়াককে আবশ্যক করে দিতাম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৭) রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরাম মেসওয়াকের আমলকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে প্রবেশ করেই প্রথমে মেসওয়াক করতেন বলে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন ঘরে প্রবেশ করতেন, তখন সর্বপ্রথম মেসওয়াক করতেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৩) রাসুলুল্লাহ (সা.) এর শয্যা পাশেই মেসওয়াক পাওয়া যেত। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুমানোর সময় পাশে মেসওয়াক রাখতেন। ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই তিনি মেসওয়াক করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৫৯৬৯) সাহাবায়ে কেরামও মেসওয়াকের প্রতি খুব বেশি গুরুত্বারোপ করতেন। সালেহ ইবনে কায়সান (রহ.) বলেন, ‘হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর অন্য সাহাবিগণ চলাফেরা করার সময় কানের উপর মেসওয়াক গুঁজে রাখতেন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ১৮০৫)।

মেসওয়াকের ফজিলত : প্রিয় নবির প্রিয়তম সুন্নাতের নাম মেসওয়াক। এটি এত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত যে, স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) তা ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করতেন। হজরত ওয়াসিলা ইবনে আসকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে মেসওয়াকের আদেশ করা হয়েছে। আমার আশঙ্কা হতে লাগল, না জানি তা আমার উপর ফরজ করে দেওয়া হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৬০০৭) মেসওয়াক আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মেসওয়াক মুখের পবিত্রতা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ০৫) মুমিন জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া এবং সফলতা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘আর আল্লাহর সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড় বিষয়।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৭২)।

মেসওয়াক করে নামাজ: অজুর পূর্বে মেসওয়াক করে সেই অজু দিয়ে নামাজ আদায় করা এবং মেসওয়াক বিহীন অজু দ্বারা নামাজ আদায় করার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মেসওয়াক করে এক নামাজ মেসওয়াক বিহীন সত্তর নামাজ থেকেও উত্তম।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬৩৪০)। মেসওয়াক ও আধুনিক বিজ্ঞান: গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যা খায় তার ময়লা কুলি করার দ্বারা পরিপূর্ণ পরিষ্কার হয় না। সাধারণত মানুষের দাঁত নষ্ট হয় শয়নকালে। দিনের বেলায় মানুষ কখনো কথা বলে, কখনো পানাহার করে। তাই এসময় মুখের গতিশীলতার কারণে রক্তরস বা রক্তলসিকা তার কাজ করার সুযোগ পায় না। রাতের বেলায় যখন মুখ বন্ধ হয়ে যায়, তখন সুযোগ আসে তার কাজ করার। এ কারণেই দাঁত রাতের বেলায় অধিক খারাপ হয়। ঘুমানোর পূর্বে তাই দাঁত পরিষ্কার করা উচিত। সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বেই ঘুমানোর পূর্বে মেসওয়াকের মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার করে নেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছে ইসলাম। যার উপকারিতা এখন বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত।

একটি বিভ্রান্তি নিরসন: রোজা রেখে শেষ বিকেলে মেসওয়াক করা যাবে না মর্মে একটা ধারণা লোকসমাজে প্রচলিত আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর হাদিস ‘রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়ে অধিক সুঘ্রাণসম্পন্ন’ সম্ভবত এখান থেকেই উল্লেখিত ধারণাটির উৎপত্তি। প্রকৃতপক্ষে অনাহারজনিত কারণে পাকস্থলীতে সৃষ্টি হওয়া দুর্গন্ধের জন্য এটা প্রযোজ্য। মুখের অপরিচ্ছন্নতার কারণে সৃষ্টি হওয়া দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছেও ঘৃণিত। হাদিস শরিফে হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা পবিত্র, তিনি পবিত্রতা ভালোবাসেন। তিনি পরিচ্ছন্ন, তাই পরিচ্ছন্নতা ভালোবাসেন।’ (জামে ছগির, হাদিস: ১৭৪২) তাই রোজা অবস্থায়ও শেষ বিকেলে মেসওয়াক করে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা আবশ্যক। আল্লাহ তায়ালা মেসওয়াকের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতের উপর আমাদের আমল করার তওফিক দান করুন। আমিন।